শয্যাশয়ী বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়ে মামলা নিলেন বিচারক

শয্যাশয়ী চার সন্তানের জননী জাহানুর বেগম (৮০) অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সম্পত্তিও বিক্রি করতে দিচ্ছে না দুই সন্তান। এমন পরিস্থিতিতে আইনের আশ্রয় নিতে চাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু আদালতে যাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা নেই। বিষয়টি জানতে পেরে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় বরিশাল অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ মামলাটি গ্রহণ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন।

ওই বৃদ্ধা মামলায় উল্লেখ করেন, আমার স্বামী ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে আমি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হই। সর্বশেষ ব্রেনস্ট্রোক, মেরুদণ্ড অচল এবং পিঠে ক্ষত ও প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হই। মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও ভরণপোষণের আবেদন করা হয়।

মামলায় বরিশাল নগরীর বৈদ্য়পাড়ার জোড়াপুকুর এলাকার জাহানুর বেগম তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ও মেয়ে সাবিনা আক্তারকে বিবাদী করেছেন। মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, খুলনায় আমি স্বামীর ঘরে থাকতাম। আমার চিকিৎসার খরচের জন্য আমি খুলনার সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেই। ক্রেতা বরিশালে আসলে তাদের সঙ্গে কথাও বলি। ২২ অক্টোবর আসামিরা বরিশালে এসে সম্পত্তি বিক্রি করতে দেবে না বলে জানায় এবং আমি অসুস্থ, ভরণপোষণ দরকার বললেও তারা আমার ভরণপোষণ দিতে পারবে না বলে জানায়। কোনো টাকাপয়সাও দিতে পারবে না- এমন কথা স্পষ্ট বলে। এরপর আমার সাথে খারাপ আচরণ করে তারা চলে যায় ও এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ নেয়নি।

বরিশাল সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, জাহানুর বেগম পিতামাতার ভরণপোষণ আইন মোতাবেক মোস্তাফিজুর রহমান ও সাবিনা আক্তারের বিরুদ্ধে ওকালতনামাসহ নালিশি দরখাস্ত বাহক মারফত আদালতে প্রেরণ করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী ও নালিশি দরখাস্তের বাহককে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিচারক জানতে পারেন বাদী শয্যাশায়ী। এ কারণে তিনি আদালতে আসতে পারেননি। এ অবস্থায় প্রকাশ্যে বাদীকে পরীক্ষা করা যায়নি। তিনি বলেন, এজলাসের কার্যক্রম শেষে আমাকে সঙ্গে নিয়ে বিচারক নালিশি দরখাস্তের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বাদীর বাসায় যান। বাদী বৃদ্ধার আইনজীবী ও আমার উপস্থিতিতে বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারক। বাদীর অভিযোগ প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হয়। বিচারক মাসুম বিল্লাহ সমন জারি করার পাশাপাশি ১ নভেম্বরের মধ্যে আসামিদের আদালতে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন। জাহানুর বেগম বর্তমানে তার ছোট মেয়ে সাহিদার সঙ্গে বসবাস করছেন। এদিকে এ জাতীয় পদক্ষেপ মানুষের দোরগোড়ায় বিচার পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ফজলুল হক বিশ্বাস।